হাতি আর শিয়ালের গল্প | পঞ্চম শ্রেণি বাংলা | Class 5 Bangla

 পেজ--১৬ 


                    হাতি আর শিয়ালের গল্প 





সে অনেক- অনেক দিন আগের কথা। চারদিকে তখন কী সুন্দর সবুজ বন, ঝোপঝাড়। আর দিগন্তের ঝুঁকে পড়া নীল আকাশের ছোঁয়া। এরকম দিনগুলোতে মানুষেরা থাকত লোকালয়ে আর পশুরা জঙ্গলে। 


মানুষ তখন একটু একটু করে সভ্য হচ্ছে। কী করে সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকা যায়,শিখছে সেইসব কায়দাকানুন। 

ও- দিকে বনে বনে তখন পশুদের রাজত্ব। হাজার রকমের প্রাণী, অসংখ্য পাখ-পাখালি। বেশ শান্তিতেই কাটছিল বনের পাখি আর প্রাণীদের দিনগুলো। কিন্তু একদিন হলো কি তাড়া খেয়ে মস্ত একটা হাতি এই বনে ঢুকে পড়ল। হাতিটার সে-কী  বিশাল শরীর। পা গুলো বট পাকুড় গাছের মত মোটা। শুঁড় এতটাই লম্বা যে আকাশের গায়ে গিয়ে বুঝি ঠেকবে। তার গায়ে ও অসীম জোর। এই শরীর আর শক্তি নিয়েই তার যত অহংকার। মেজাজটা ও দারুন তিরিক্ষি।

হাতি আর শিয়ালের গল্প পঞ্চম শ্রেণি বাংলা



পেজ--১৭


তো - যেই না হাতিটার ঐ বনে ঢোকা, অমনি শুরু হয়ে গেল তোলপাড়। নতুন অতিথি এসেছে, সবাই স্বাগত জানাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। কিন্তু ঐ দুষ্টু হাতিটার সে কী তুলকালাম কান্ড! খুব জোরে গলা ফাটিয়ে দিল প্রচন্ড একটা হুঙ্কার।  থরথর করে কেঁপে উঠল সমস্ত বন। গাছে গাছে পরম নিশ্চিন্তে বসেছিল পাখি, তারা ভয়ে ডানা ঝাপটাতে শুরু করল। মাটির তলায় লুকিয়ে ছিল যে ইঁদুর, গুবরে  পোকার দল। তারা বুঝতে চাইল কী এমন ঘটল যে এমন করে কেঁপে উঠল মেদিনী ? হাতিটা এমন ভাব শুরু করতে শুরু করল, সেই বুঝি বনের রাজা। গুরুগম্ভীর ভারিক্কি চালের কেশর দোলানো অমিত শক্তিধর সিংহ। সেও হাতিটার কাছে আসতে ভয় পায়। হালুম বাঘ মামা, সেও হাতিটার ধারে -কাছে ঘেঁষতে চায় না। বনের সবাই ভয়ে তটস্থ, শঙ্কিত। কখন জানি কী হয়! একবার তো কী জানি কি হয়েছে। নিরীহ একটা হরিণকে শুঁড়ে জড়িয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল দূরে। আরেকবার ছোট্ট একটা পিঁপড়ে পায়ের তলায় পিষে মেরে ফেলল। সেই থেকে বনের কোন প্রাণী হাতিটার ছায়া ও মাড়াত না। দিনে  দিনে হাতিটা হয়ে উঠল আরও  অহংকারী। এই নিয়ে বনের কারো মনে শান্তি নেই। কিন্তু এভাবে কি দিন যায়? এক সন্ধ্যায় বনের সব প্রাণী এসে জড়ো হলো সিংহের গুহায়। এর একটা বিহিত চাই, সবার মুখে এক কথা। বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, বানর, হরিণ, বনবিড়াল, শিয়াল সলা- পরামর্শ করতে বসল। শেষে সবাই মিলে শিয়ালের উপরের ভার দিল। দিন আসে, দিন যায়।একদিন শিয়াল ভয়ে ভয়ে হাজির হলো হাতির আস্তানায়। লেজ গুটিয়ে একটা সালাম দিল। বলল, আপনি তো বনের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী। আপনিই আমাদের রাজা। ওই দেখুন, নদীর ওপারে সবাই উদগ্রীব হয়ে বসে আছে। আপনাকে রাজা হিসেবে বরণ করে নিতে চায় সবাই। হাতি তো শিয়ালের কথা শুনে মহাখুশি। আচ্ছা চল। নদীর পারে  এসে শিয়াল বলল, এই আমি নদী সাঁতরে পার হচ্ছি। আপনিও আসুন। এই বলে শিয়াল নদীতে দিল ঝাঁপ। হাতি ভাবল,পুঁচকে শিয়াল যদি নদী পার হতে পারে, আমি পারব না কেন?  সেও নদীতে নেমে পড়ল।  কিন্তু মস্ত বড় তার শরীর আর কি ভারী! হাতিটা নদীর পানিতে পা দিল। অমনি তার ভারী শরীর একটু একটু করে তলিয়ে যেতে থাকল। তলিয়ে যেতে যেতে হাতি বলল, শিয়াল ভায়া, আমাকে বাঁচাও। শিয়াল ততক্ষণে নদী পার হয়ে তীরে উঠে এসেছে। বনের সমস্ত প্রাণী তার পেছনে এসে দাঁড়াল।



পেজ---১৮



শিয়াল হাতিকে বলল, তোমাকে বাঁচাব আমরা? ততদিন তোমার অত্যাচারে  আমরা কেউ বনে শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্যেই তো নদীতে নিয়ে এসেছি।  বনের যত প্রাণী ছিল, সবাই শিয়ালের কথার প্রতিধ্বনি করে সমস্বরে বলে উঠল :


ঠিক বলেছ শিয়াল ভায়া

আর দেখবো না হাতির ছায়া

আমরা এখন মুক্ত স্বাধীন

নাচছি সবাই তা-ধিন তা-ধিন। 

                                        (হিতোপদেশ অবলম্বনে)

হাতি আর শিয়ালের গল্প পঞ্চম শ্রেণি বাংলা


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এই দেশ এই মানুষ | পঞ্চম শ্রেণি বাংলা | Class 5 Bangla

নতুন দেশ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সপ্তম শ্রেণি | Class 7 Bangla

বাংলা রচনা আমাদের জাতীয় পতাকা | সপ্তম শ্রেণির বাংলা ২য় পত্র | Class 7 Bangla second Paper